বিসিএস পরীক্ষায় ভাল করতে হলে যা করতে হবে- সুসান্ত পাল




Related image

বিসিএস এ বাংলা ও ইংরেজিতে ভালো করার দাওয়াই

সকল চাকরির খবর আগে পেতে আমাদের গ্রুপে যুক্ত হোন

ধরে নিই, হাতে আরো দুই মাস সময় আছে। বিসিএস মানেই লিখিত পরীক্ষার খেলা, যেটা সম্পূর্ণই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে। যাঁদের প্রস্তুতি অতটা নেই, তাঁরা এই দুই মাস বাসায় দৈনিক গড়ে অন্তত ১৫ ঘণ্টা করে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারলে চাকরিটা পাবেনই! যাঁদের প্রস্তুতি ভালো, তাঁরা ওই পরিমাণ পড়তে পারলে পছন্দের প্রথম ক্যাডারটিতে মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকার কথা। এই সময়টাতে বাজে জিনিস পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। কঠোর পরিশ্রম নয়, হিসেবি পরিশ্রমই বড় কথা। বাংলা ও ইংরেজির প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা বলছি আমার মতো করে, আপনি আপনার মতো করে পরামর্শগুলোকে কাজে লাগাবেন। যে ক্যান্ডিডেট প্রশ্নের ধরন যত ভালো বোঝে, তার প্রস্তুতি তত ভালো হয়। গাইড বইয়ের সাজেশন দেখে এবং প্রশ্নের ধরন ও প্রাসঙ্গিকতা বুঝে নিজেই সাজেশন তৈরি করবেন। কারো সাজেশনই ফলো করবেন না। এরপর সেই প্রশ্নগুলো কয়েকটি গাইড ও রেফারেন্স থেকে পড়ে ফেলুন।

নোট করার সময় নেই, উত্তরগুলো অন্তত চারটি গাইড বই থেকে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ুন। আমি মনে করি, পাঁচটি রেফারেন্স বই পড়ার চেয়ে ১টি বাড়তি গাইড বই পড়া বেটার। ব্যাকরণ অংশটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ভাষা-শিক্ষা, দর্পণ, গাইড বই থেকে পড়ুন। প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ খুবই সহজ ভাষায় প্রাসঙ্গিকভাবে লিখুন। ভাব-সম্প্রসারণের জন্য দেখতে পারেন দর্পণ। পড়তে পারেন বাংলাদেশের আর কলকাতার লেখকদের বইও। উদাহরণ আর উদ্ধৃতি দিয়ে সময় নিয়ে খুবই চমত্কার গাঁথুনিতে ২০টি প্রাসঙ্গিক বাক্য লিখুন। সারমর্ম দুই-তিনটি সহজ-সুন্দর বিমূর্ত বাক্যে লিখতে হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর গাইড বই, লাল-নীল দীপাবলি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস—এ বইগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলো ‘বাদ দিয়ে’ ‘বাদ দিয়ে’ পড়ুন। উদ্ধৃতি দিন, মার্কস বাড়বে। বিসিএস পরীক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো অনুবাদ। যত কষ্টই হোক, প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকার আর্টিকেল আর সম্পাদকীয় থেকে একটি বাংলা থেকে ইংরেজি আর একটি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ না করে ঘুমাতে যাবেন না। এতে আপনার আরো কিছু অংশের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এই অংশটি ফাঁকি না দিয়ে প্র্যাকটিস করলে আপনি আপনার কম্পিটিটরদের চেয়ে অন্তত ৭০ মার্কস বেশি পাবেন। কাল্পনিক সংলাপের জন্য পেপারে গোলটেবিল বৈঠকগুলোর মিনিটস্, টক শো, গাইড বই থেকে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ধারণা নিন।

মানুষের জীবনের একটা সত্যিকার সাংঘাতিক গল্প
ভাষা-শিক্ষা আর বিভিন্ন গাইড বই থেকে পত্রলিখন পড়তে পারেন। বিখ্যাত ৪০টি বই সম্পর্কে জেনে নিন গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য। সাজেশন রেডি করে ইন্টারনেট, গাইড বই, রেফারেন্স বই থেকে রচনা পড়ুন। যেকোনো তিনটি প্যাটার্নের ওপর প্রস্তুতি নিন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ মিনিট আগে উপসংহার লেখা শুরু করুন। উদ্ধৃতি দিন, বেশি লিখুন, প্রাসঙ্গিক লিখুন, বেশি মার্কস পান। রিডিং কম্প্রিহেনশনের জন্য বেশি বেশি করে ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলো পড়বেন। প্যাসেজের আগে প্রশ্নগুলো অন্তত তিনবার ভালো করে পড়ে ফেলুন। প্রশ্নে কী জানতে চেয়েছে, সে কি-ওয়ার্ড কিংবা কি-ফ্রেজটা খুঁজে বের করে আন্ডারলাইন করুন। এরপর প্যাসেজটা খুব দ্রুত পড়ে বের করে ফেলতে হবে, উত্তরটা কোথায় কোথায় আছে। এই অংশটি আইএলটিএসের রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করে প্র্যাকটিস করলে খুব ভালো হয়। গ্রামার ও ইউসেজের জন্য কয়েকটি গাইড বই থেকে প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, ব্যারন্সের গ্রামারসহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বই কষ্ট করে উল্টেপাল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যাস করুন, অনেক অনেক কাজে আসবে। ইংরেজিতে ভালো করতে হলে সার্বক্ষণিক সঙ্গী করতে হবে ডিকশনারি। সামারির জন্য প্রতিদিনই পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলোকে সামারাইজ করুন। প্যাসেজটি ভালোভাবে অন্তত পাঁচবার খুব দ্রুত পড়ে মূল কথাটি কোথায় কোথায় আছে, দাগিয়ে ফেলুন। পুরো প্যাসেজটি তিনটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগকে একটি করে সহজ বাক্যে নিজের মতো করে লিখুন। ব্যস, হয়ে গেল সামারি! লেটারের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রতিদিন পত্রিকার ‘লেটার টু দি এডিটর’ অংশটি পড়ুন, সঙ্গে কিছু গাইড বই।


এসেইর জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েবপোর্টাল, কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখুন। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে। এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করুন। কোটেশন ছাড়া রচনা লেখা মোটেও ঠিক নয়! বানান আর গ্রামার ভুল না করে খুব সহজ ভাষায় ইংরেজি লিখলে মার্কস আসবেই আসবে। আপনার বাংলা খাতাটি অন্য ১০ জনের মতোই, অথচ আপনি মার্কস পাবেন একটু বেশি—এটা হয়তো আপনি আশা করেন, কিন্তু পরীক্ষক এটা কল্পনাও করেন না। কম প্র্যাকটিস, বেশি আরাম, কম মার্কস, রেজাল্ট জিরো—এটি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করা যতটা সোজা, চাকরি পাওয়াটা ততটাই কঠিন। প্রতিদিন পড়াশোনা করার সময় মাথায় রাখবেন, আপনি কারোর চেয়ে তিন ঘণ্টা কম পড়ার মানেই হলো, আপনার চেয়ে তার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি।

৩০ বছর ধরে একটা চাকরি করবেন, আর সেটি পাওয়ার জন্য দুই মাস দৈনিক চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন না, তা কী করে হয়? পড়ুন, বুঝে পড়ুন এবং বেশি পড়ুন। যাঁর রিডিং হ্যাবিট যত ভালো, তাঁর রাইটিং স্টাইল তত উন্নত। লোকে চাকরি পায় দক্ষতা আর মেধায় নয়, চেষ্টা আর যোগ্যতায়। অতি মেধা, অতি বুদ্ধি, অতিপাণ্ডিত্য বেশির ভাগ সময়ই চাকরি পাওয়ার সব সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। কম কম বুঝুন, কম কম বলুন, বেশি বেশি পড়ুন—বিসিএস এ চাকরি নিশ্চয়ই পাবেন!