অমর একুশে নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের নগ্নপ্রকাশ


বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক মর্মন্তুদ অথচ গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। বিশ্বের ইতিহাসে ভাষার জন্য অকাতরে জীবন দেয়ার দৃষ্টান্ত একমাত্র আমরাই স্থাপন করতে পেরেছি।
বস্তুত, ভাষাশহীদদের রক্তস্নাত পথ ধরেই জাতি পৌঁছে ছিল '৭১-এর বিজয়-তোরণ দ্বারে। এ কারণে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য শুধু বায়ান্নতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ওই আন্দোলনের অঙ্কুরিত বীজই পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সফল পটভূমি রচনা করেছিল। বাস্তবতা পেয়েছিল একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্ন।
ভাষার জন্য বাঙালির সেই আত্মবলিদানের স্বীকৃতি ও সম্মান দিয়েছে তাবৎ বিশ্ব। যে কারণে আমাদের ‘অমর একুশে ফেব্রুয়ারি’ এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবেও পালিত হচ্ছে।
জাতির সূর্যসন্তান ভাষাশহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের স্মৃতি চিরজাগরুক হয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। কিন্তু ভাষার এ মাসে বিস্মৃতির এ কোন নজির দেখালো মাস্টারমাইন্ড স্কুল কর্তৃপক্ষ! এটা কি নিছক ভুল? অবজ্ঞা? নাকি আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে সীমাহীন উদাসীনতার নগ্নপ্রকাশ।
অমর একুশে উপলক্ষে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের ব্যানার দেখে এসব প্রশ্নই জাগছে সচেতন নাগরিকদের মনে। কালো রঙের পটভূমিতে লেখা রয়েছে ‌আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...। এক পাশে দেখা যাচ্ছে বাঙালির আত্মগরিমার প্রতীক শহীদ মিনার। কিন্তু ঠিক তার উপরের দৃশ্য দেখেই চক্ষু চড়কগাছ!
শহীদ মিনারের উপরে সুনিপুণভাবে আঁকা হয়েছে ভাষাশহীদ নন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৭ বীরশ্রেষ্ঠর ছবি। লীনা পারভীন তার ফেসবুক ওয়ালে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ছবিটি পোস্ট করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেই ছবি ভাইরাল। ধিক্কার জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
নাদেরা সুলতানা নদী মন্তব্য করেছেন- ...এবার একটা ঝড় উঠুক, কোথাও তো কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না, কান্না পাচ্ছে আমার খুব!!!
আশরাফুল আজম খান নামে একজন মন্তব্য করেছেন- আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ যে হইতেছে তাহার নিদর্শন বৈকি!
আমিনা আফরোজ আনা লিখেছেন- ইতিহাস বিকৃত হতে হতে শেষে কোথায় যে গিয়ে দাঁড়াবে!
নাজমুল তপন মন্তব্য করেছেন- ধরনী দ্বিধা হও!
প্রশ্ন হচ্ছে- মাস্টারমাইন্ড স্কুল কর্তৃপক্ষ হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানে ফরমায়েশ দিয়ে ব্যানারটি বানিয়েছে। ধরে নিলাম স্বল্পশিক্ষিত পেশাদার আর্টিস্ট ভুল করে ভাষাশহীদদের স্থলে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি এঁকেছেন। কিন্তু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসের এ ব্যানারটি টানানোর আগে একবার চোখ বোলানোর সময় হলো না কর্তৃপক্ষের! তারা কি একবারও ব্যানারটি দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না? নাকি বাণিজ্য-বেসাতির ধান্দায় তারা চোখে ঠুলি পরে আছেন। যে কারণে এতো বড় ভুলটি তাদের চোখে পড়লো না!